রুহুল হাসান শরীফ ॥ সামরিক শাসনে ঠিকানা হারা বাবুল জীবনের শেষ বয়সে পেয়েছেন আশ্রয়। সে সাথে পেয়েছেন নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা। তাই মাঘের হাড় কাঁপানো শীতেও বাবুল মিয়ার পরিবারসহ ৭৩ পরিবারে উষ্ণতা বিরাজ করছে । পাকা বাড়িতে কাটাবেন তারা জীবনের বাকিটা সময়। ছেলে মেয়েদের নিশ্চিন্ত আবাস পাওয়ায় তারা আনন্দের বন্যায় ভাসছেন। গত শনিবার চুনারুঘাট উপজেলার গাজিপুর ইউনিয়নে ইকরতলী গ্রামে ৭৪টি পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে নতুন পাকা ঘরসহ ২শতক ভূমির মালিকানা পেয়েছেন। উপকারভোগি পরিবারগুলোর শুরু হয়েছে নতুন জীবনের পথচলা। ঘর পাওয়া বেশীর ভাগ পরিবারই ছিলেন কালেঙ্গা বনাঞ্চলের বাসিন্দা। ছিল না নিজস্ব ঠিকানা। বাড়ির মালিকানা পেয়ে বাবুল মিয়া জানান, তার পূর্ব পুরুষ নোয়াখালী জেলার বাসিন্দা। দেশ স্বাধীনের আগে বনায়নের কাজে পিতা আব্দুল আজিজ এসেছিলেন কালেঙ্গা ফরেষ্ট বিটে। বসবাস করতেন সরকারী ভূমিতেই। স্থানীয়ভাবে তারা ‘ভিলেজার’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৮২ সালে সামরিক শাসনের সময় সংরক্ষিত বন এলাকা থেকে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়। হয়ে যান ছন্নছাড়া। এবাড়িতে সেবাড়িতে নিরাপত্তাহীন বসবাস করেছেন দীর্ঘ সময়। পরিববারগুলো অধিকাংশই দিনমজুর। পরের জমি চাষাবাদ বা দিনমজুরী করেই এতোদিন চলেছে অনিশ্চিত ভবিষ্যত। একটি পাকা ঘর ছিল এসব পরিবারের কল্পনার বাইরে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা উপহার হিসেবে আজ তাদের ভাগ্যে জুটেছে নতুন বাড়ি। ২ মেয়ে ৩ ছেলের পিতা বাবুল মিয়া বলেন, ইতোমধ্যে ২ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে রকিবুল একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করে পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করছে। স্ত্রী আর দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি নতুন ঘরে উঠবেন। মোছাঃ আমিনা বেগমের স্বামী কামাল মিয়া একজন পঙ্গু। ৪ মেয়ে ২ ছেলে তার সংসার। ২মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। তিনিও বাড়ি পেয়েছেন। কিন্তু নতুন পরিবেশে এসে কি করে ভাতের জোগার করবেন এ নিয়ে কিছুটা চিন্তায় আছেন। সরকার ইকরতলী গ্রামে কর্মের সুযোগ করে দিলে স্থায়ী ঘর পাওয়া লোকজন সহজে ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন বলে জানান তিনি। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান জানান, ইকরতলী গ্রামে ২ একর ৬শতক ভূমি এতোদিন কিছু লোক অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। তাদেরকে উচ্ছেদ করে ওই ভূমিতে ৮০টি ঘর নির্মানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৭৪টি পাকা গৃহ তৈরী করা হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। স্থানীয় আমুরোড বাজার থেকে ওই আশ্রায়ন প্রকল্পটি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। এরমধ্যে ১ কিলোমিটার রাস্তা কাঁচা। র্স্তাাটি পাকা করনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে পল্লী বিদ্যুত সরবরাহ লাইন সম্প্রসারণ করেছে। বিশুদ্ধ পানির সরবরাহের জন্য বসানো হয়েছে ১০টি টিউবওয়েল। পর্যায়ক্রমে সেখানে খেলার মাঠ ও স্কুল তৈরী করা হবে। তিনি জানান হবিগঞ্জ জেলায় মোট ৭শ ৮৭টি গৃহ নির্মানের জন্য মোট ১৩ কোটি ৮৫ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে প্রকাশ, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৩৫টি, শায়েস্তাগঞ্জ ৫৫টি, লাখাই ৭৭টি, নবীগঞ্জ ১১০টি, বানিয়াচঙ্গ ১০৫টি, আজমিরিগঞ্জ ৮৮টি , চুনারুঘাটে ৮০টি , বাহুবল ৫৭টি এবং মাধবপুরে ৮০টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩২৫টি ঘর নির্মানের পর গৃহহীন পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a Reply