স্বদেশবার্তা রিপোর্ট \ পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের সুনাম নষ্ট হচ্ছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরা। সংকট মোকাবেলায় পেঁয়াজ আমদানির ওপর থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়। পর্যাপ্ত মজুদ থাকার পরও মূল্য বৃদ্ধি করায় অভিযান পরিচালনা করতেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দাবি জানিয়েছেন সরকারি ও বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন, সরকারি দলের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সংসদে অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে নাসিম বলেন, পেঁয়াজের ঝাঁজ এখন সর্বত্র। দাম কেন বাড়ছে এ বিষয়টি আমার কাছে বোধগম্য নয়। এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে পেঁয়াজ রফতানি করতে অনুরোধ করেছেন। মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যের সমর্থন করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির ব্যাপারে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর অনেক কর্তব্য রয়েছে। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ বুলবুল আঘাত হানার কারণে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেয়েছে। আজ পত্রিকায় দেখলাম, খুব দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাকে বলতে হয়, পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা। এটা কোনো দিন আমরা ভাবিনি। তিনি আরও বলেন, এবার ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়নি। তবে আমরা সাধারণত আমাদের পণ্যের মজুতের বিষয়ে আগেই মূল্যায়ন করি। আমাদের বার্ষিক চাহিদা কত? আমাদের আছে কত? আর যেটা কম সেটা আমরা তুরস্ক, মিসর, মিয়ানমারসহ আগেই আমদানি করি। টিসিবি এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ছোটকালে আমরা যে রকম বিস্কুট দৌড় খেলতাম সেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন পেঁয়াজ নিয়ে রসিকতা চলছে। আশা করি, সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জোট সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষে শিল্পমন্ত্রী বলেছিলেন পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ কথা বলার পর দিনই পেঁয়াজের দাম হয়ে গেল দেড়শ টাকা। আবার আজকে পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা। পাশাপাশি আমি গুগলে সার্চ দিয়ে দেখলাম, ভারতের কৃষক কাঁদছেন। কারণ পেঁয়াজের মূল্য ৮ টাকা কেজি। আমার প্রশ্ন হলো, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে তো ভালো সম্পর্ক। সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চয়ই আমরা বা প্রধানমন্ত্রী যদি ব্যক্তিগতভাবে পদক্ষেপ নিতেন তাহলে পেঁয়াজের ক্রাইসিস থাকতো না।
হবিগঞ্জে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে ১৪০ টাকার পেঁয়াজ এখন ২০০ টাকা। বৃহস্পতিবার আড়তদাররা পাইকারী ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। আর খুচরা বাজারে তা ২০০ টাকা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে না। এছাড়া আমাদের মজুদ পেঁয়াজও শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা চট্টগ্রাম থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে আনছি। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের দাম বাড়াতে হয়েছে। এদিকে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বৃহস্পতিবার ২০০ টাকায় পৌঁছেছে। পৌর এলাকার কাঁচা বাজারে কোনো কোনো দোকানে পেঁয়াজ ১৮০ টাকা বিক্রি হলেও তারা জানাচ্ছেন কম দামে কেনা ছিল, তাই বিক্রি করতে পারছি। আজ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন আসা পেঁয়াজ পাইকাররা বেশি দামে বিক্রি করছেন, তাই আমরা দাম কমাতে পারি না। এদিকে গ্রামাঞ্চলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি বলে জানা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত আর দাম কমার সম্ভাবনা নাই। তবে বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ হলে দাম কমে যাবে। পেঁয়াজ ক্রেতা রাজিব দেব বলেন, কাল বাসায় এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) পেঁয়াজ নিয়েছি ৪০ টাকা দিয়ে। স্ত্রীকে পেঁয়াজ কমিয়ে তরকারিতে দিতে বলেছি। গত দুদিনেই বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। বাজারে পেঁয়াজের সিন্ডিকেট এ দাম বাড়িয়েছে।
সারাদেশের পেঁয়াজের বাজারকে টপকিয়ে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার কাজীর বাজার ,ফার্ম বাজার,সৈয়দপুর বাজার,আউশকান্দি বাজার,নতুন বাজার,ইনাতগঞ্জ বাজারসহ সব বাজারেই এখন পিঁয়াজের মূল্য ২০০শত টাকা হওয়ায় পেঁয়াজ নিয়ে হইচই । সব ধরনের ক্রেতারাই বলছেন সেঞ্চুরী শেষ করে এখন ডাবল সেঞ্চুরী করল পেঁয়াজ। আবার কেউ বলছেন পেয়াঁজ শুধু সেঞ্চুরীই করেনাই চোখে জলও ফেলেছে। সরেজমিনে নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে খোজ নিয়ে দেখা যায়, পেয়াঁজের ঝাজে পেঁয়াজ না ক্রয় করেই কাঁচা বাজার ত্যাগ করছেন ক্রেতারা। সবার মুখে একিই আলাপন কবে নামবে পেয়াঁজের দাম। পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাবারের মূল্য হয়েছে দ্বিগুন।রেস্টুরেন্টে মালিকরা জানান সব সু-স্বাদু খাবারই রান্না করতে বেশি পেয়াঁজ প্রয়োজন হয় তাই খাবারের মান ঠিক রাখতে পেয়াঁজত দিতেই হবে এর জন্য খাবারের দাম একটু বেশি নিতে হচ্ছে।আর হাতের নাগালে পেয়াঁজের দাম না থাকায় হতাশ হয়েছেন সব শ্রেণির মানুষ আর সাধারণ মানুষত ক্রয় করতেই পারছেননা। পেয়াঁজ ছারাই এখন রান্না হয় অনেক ঘরের খাবার।বাজারে মহিলা ক্রেতারা বলেন আগে পেয়াঁজ কাটতে চোখ জ্বলত এখন পেয়াঁজ ক্রয় করতে চোখে জল আসে। দুই মাস ধরে ঘোরার দৌড়ের মত পেয়াঁজের দাম হু হু করে বেরেই চলছে। পেঁয়াজের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পাইকারী বাজারে পেয়াঁজের দাম বেশি হওয়ায় তাদেরকেও বিক্রি করতে হচ্ছে চরা দামে। সরকারে একমাত্র সঠিক পক্ষেপই পারে পেয়াঁজের বাজারের এই জটিল সংকট থেকে মুক্তি দিতে বলে সাধারণ মানুষের ধারনা।
Leave a Reply